যন্ত্রসঙ্গীত বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ও কিছু শব্দের অর্থ নিয়ে আজকের আয়োজন। আপনি আপনার শিক্ষার নানা পর্যায়ে এই শব্দগুলো শুনবেন ও এইসব প্রশ্নের মুখমুখি হবেন। তাই আগে থেকে এই উত্তরগুলো জানা থাকা ভালো।
যন্ত্রসঙ্গীত বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
সংকীর্ণ রাগ কাকে বলে?
যে রাগ দুইয়ের বেশি রাগের সংমিশ্রণে গঠিত তাকে সংকীর্ণ রাগ বলে।
মূর্ছনা কাকে বলে? মূর্ছনা কত প্রকার ও কী কী? তাদের নাম লেখ।
সাতটি স্বরের প্রত্যেক স্বর থেকে তার আরোহণ ও অবরোহণের যে ক্রম তাকে মূর্ছনা। হয় ৷ মূর্ছনা মোট একুশটি। এই মূর্ছনাগুলো রাগের উৎপত্তিস্থল।
মূর্ছনাগুলোর নাম হলো- (১) আমোদিনী (২) বিনোদিনী (৩) প্রমোদিনী (৪) দীর্ঘ (2) বয়ংকা (৭) আনন্দী (৮) প্রলাপী (৯) আলাপী (১০) বিশ্রামিনী, (১১) কামিনী (১২) আরামিনী কোমলী (১৪) নির্মলী (১৫) যমলী (১৬) বিহারিণী (১৭) বিস্তারিণী (১৮) লজ্জা (১৯) সংকেত

সন্ধি প্রকাশ রাগ কাকে বলা হয়?
দিন ও রাত্রির মিলনক্ষণকে সন্ধি প্রকাশ বোঝায়। অর্থাৎ দিনের শেষ এবং রাত্রির শুরু কিংবা রাত্রির শেষ এবং দিনের শুরু। সারা দিনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সন্ধিক্ষণ দুবার আসে ঊষাকাল এবং সায়ংকাল। এ সময়ে যে রাগগুলো পরিবেশন করা হয় সেগুলোই হলো সন্ধিপ্রাশ রাগ।
পরমেল প্রবেশক রাগ কী?
একটি মেল বা ঠাট থেকে অপর মেল বা ঠাটে যাওয়ার অর্থ হলো পরমেল প্রবেশক। একটি ঠাঁট থেকে পরবর্তী ঠাটে প্রবেশের জন্য পরবর্তী ঠাটের ইঙ্গিতবহ যে রাগ পরিবেশন করা হয়, সেই বিশেষ রাগটিকে পরমেল প্রবেশক রাগ বলা হয়।
অলংকার বা পাল্টা কাকে বলে?
বিভিন্ন বর্ণ মিশ্রণজাত স্বরগুলোকে ক্রমিক আরোহ এবং একই নিয়মে অবরোহের নাম অলংকার। অলংকারকে পাল্টাও বলা হয়। যেমন- আরোহ সারেগা, রেগামা, পাগামা, মাগারে, গারেসা।
সপার্ট বা শুদ্ধ তান কী?
তান পরিবেশন করার সময় স্বরগুলোকে সরল গতিতে প্রকাশ করাকে সপাট বা শুদ্ধ তান বলে। যেমন-
নিরে গাজা পাধা নির্রে সানি ধাপা ক্ষাপা রেসা।
কুট তান কী?
তান পরিবেশন করার সময় স্বরগুলোকে বক্রগতিতে প্রকাশ করাকে কুট তান বলা হয় ।
তানের জাতি বলতে কী বোঝায়? তানের বিভিন্ন জাতির সংজ্ঞা দাও।
তানের নানা প্রকার ভেদকে জাতি বলা হয়। যেমন- সপাট বা শুদ্ধ তান, কুট তান, মিশ্র তান আলংকারিক তান, বক্র তান, ছুট তান, ফেরত তান, গমক তান, বোল তান ইত্যাদি।
মিশ্র তান কী?
যে তানে দুই প্রকার তানের মিশ্রণ থাকে তাকে মিশ্র তান বলে। যেমন- নির্সা গারে সানি সারে সানি থাপা ক্ষাপা নিনি ধাপা ক্ষাধা পাক্ষা পাধা নির্সা রেগা র্রের্সা নিধা পাক্ষা গারে সা
বক্রতান কী?
যেসকল তান সরল নয়, বক্রভাবে পরিবেশন করা হয় তাকে বক্রতান বলে। তানগুলোর স্বর রচনাও বক্র হয়ে থাকে। যেমন- মামা রেসা ধাধা পাপা রের্রে সার্সা মাধা সা ধাপা মাপা মারে সা।
ফেরত তান কী?
একই স্বরকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রয়োগ করা হলে তাকে ফেরত তান বলা হয়। যেমন- সাঝে গাল্কা ধানি ধাক্ষা সানি ধাক্ষা গাক্ষা ধাগা ক্ষাণা কসা।
ছুট তান কী?
তার সপ্তকের কোনো একটি স্বর থেকে যখন দ্রুতগতিতে নেমে আসা হয় তখন তাকে ফুট তান বলা হয়। যেমন- সা সানি ধাপা মাগা রেসা।
গমক তান কী?
তান পরিবেশনকালে স্বরগুলোকে গমকযুক্ত করা হলে তাকে গমক তান বলা হয়। যেমন- গামা মামা রেসা সাসা মামা পাপা মামা রেসা, ক্ষাপা ধাপা মামা রেসা ক্ষাপা ধানি সানি ধাপা মামা রেসা
বোল তান কী?
গানের কথা সংযোগে তান করাকে বোল তান বলা হয়। যেমন-
ধা | ধা | পা | ক্ষা | পা | গা | মা | ধা | ধা | ধা |
ক | হ | ত | রা | ০ | গ | হ | ম্বী | ০ | র |
গিটকারী কাকে বলে?
মূল স্বরটিকে উচ্চারণ করার সময় তার আগের এবং পরের স্বরদ্বয়ের সংযোগ একমাত্রা মধ্যে দ্রুত উচ্চারণ বা বাজাতে হলে একমাত্রার মধ্যে করতে হবে
কৰ্ত্তব কাকে বলা হয়?
গীতে স্বর কৌশল প্রদর্শন করাকে কর্তব বলা হয়।
গমক বলতে কী বোঝায় ?
একই স্বরে বারবার গভীরভাবে আঘাত করাকে গমক বলা হয়। অর্থাৎ শ্রোতাদের চিত্তহরণকারী স্বর কম্পন হলো গমক ।
খটকা কাকে বলে?
মীড়ের সাহায্যে মূল স্বরটির পরবর্তী তৃতীয় স্বরটি দেখিয়েই অতি দ্রুত দ্বিতীয় স্বরটিকে আন্দোলনের দ্বারা যে স্বরকম্পনের সৃষ্টি হয় তাকে খটকা বলে ।
ছুট কাকে বলা হয়?
কোনো একটি স্বরের ওপর একটু থেকে কয়েকটি স্বরের মাধ্যমে অতি দ্রুত আরোহণ করাকে ছুট বলা হয়। যেমন- পা মাগারেসা
জমজমা কাকে বলে?
জমজমা অর্থ কোনো স্বরকে আন্দোলিত করা সেতার বাদনে দুটো স্বরকে দ্রুত একের পর এক করে বাজানোকে জমজমা বলা হয়।
পুকার কাকে বলে?
বিভিন্ন সপ্তকের অন্তর্গত এক বা একাধিক স্বরের উচ্চারণকে পুকার বলে। যেমন- গা গা গা মাগা মাগা মাগা।
জোড় কাকে বলা হয়?
আলাপের শেষাংশ বা আভোগকে জোড় বলা হয়। এই অংশের আলাপের গতি দ্রুত ও ছন্দোবদ্ধ হয়। জোড়ের পর দ্রুতলয়ে ঝালার কাজ করে আলাপ শেষ করতে হয়।
ঝালা বলতে কী বোঝায়?
বাদ্যযন্ত্রে ঝালা প্রয়োগ হয়। বাজ ও চিকারীর তারে ঝালা বাজানো হয়। বিশেষ একটি অলংকারকে ঝালা বলা হয়। ঝালাকে ছেড়ও বলে আলাপের শেষাংশে অর্থাৎ জোড়ের পর এবং দ্রুত গতের শেষাংশে ঝালা বাজিয়ে গৎ শেষ করা হয়। চিকারীর তারে আঘাত দিয়ে ঝালা বাজানো হয়।
তারপরণ কাকে বলে?
পাখোয়াজের পরণের সঙ্গে সংগতি রেখে রাগবাচক স্বরসমূহের ব্যবহারকে তারপরণ বলা হয়। আলাপের শেষ ভাগে তারপরণ বাজানো হয় ।
সুত বলতে কী বোঝায়?
গানে বা বাদ্যযন্ত্র যাকে মীড় বলা হয়, ছড়ের সাহায্যে ঐ একইভাবে স্বর প্রয়োগ করাকে সুত বলা হয়। যেমন- এম্রাজ, বেহালা, তারসানাই, সারেঙ্গী প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে সুভের প্রয়োগ হয়।
। মাগারেগা
ঘসীট কাকে বলে?
যেকোনো একটি স্বরের পর্দার উপর আঙুল রেখে ঘর্ষণের দ্বারা অতি দ্রুততার সঙ্গে পরবর্তী অন্য কোনো স্বরকে প্রকাশ করাকে ঘসীট বলে।
বাজ কাকে বলা হয়?
বাজানোর বিশেষ রীতিকে বাজ বলা হয়। যেমন- মসিখানি বাজ, রেজাখানি রাজ ইত্যাদি।
তুক কাকে বলে? আলোকপাত কর।
গানের পদ বিভাগকে তুক বা অবয়ব বলা হয়। তুককলি নামেও অভিহিত। গানের তুক চার প্রকার। অস্থায়ী বা স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চরী ও আভোগ
দম ও খম কাকে বলে?
দমঃ একই স্বরে অনেক্ষণ ধরে স্থায়িত্ব হলে তাকে দম বলে।
খমঃ একই স্বরে স্বল্পক্ষণ বিশ্রামকে ধর্ম বলা হয়।
বন্দেশ কাকে বলে?
বন্দেশ অর্থ বাঁধুনি বা বন্ধন। রাগের রূপরেখা প্রকাশের জন্য নির্দিষ্ট আরোহণ ও অবরোহণ সংবলিত যেসকল স্বর সমষ্টি স্থায়ী ও অন্তরায় ব্যবহৃত হয় তাকে বন্দেশ বলে ।
গৎ কাকে বলে? গৎ কত প্রকার কী কী? নাম ও সংজ্ঞা লেখ
স্বরসমূহকে বোল বা বাণীর সাহায্যে তাল, লয় ও ছন্দের বন্ধন করাকেই গৎ বলা হয়।
গৎ দুই প্রকার। যথা: মসিনখানি গৎ ও রেজাখানি গৎ
মসিদখানি গৎ কী?
বিখ্যাত সংগীত সাধক আমীর খসরুর উত্তরসূরি আমীর খাঁ ও ফিরোজ খাঁর পুত্র মসিদ খার গতের বাজ মসিদখানি নামে পরিচিত। এই বাজের বৈশিষ্ট্য হলো, এই বাজে বন্দেশী হয়। বিলম্বিত লয়ে। এই বাজের গতকে দিল্লি বা পশ্চিমী বাজও বলা হয়।
রেজাখানি গৎ কী?
তানসেন বংশীয় ও তাঁর শিষ্য সম্প্রদায়ের উত্তরসূরি গুলাম খা যে বাজের প্রবর্তন করেন তাকে রজাখানি বা রেজাখানি বাজ বলা হয়। এই বাজ পূর্ব বা পুরবকা বাজ নামেও পরিচিত। রেজাখানি গৎ দ্রুতলয়ে বাজানো হয় এবং এর প্রকৃতি চঞ্চল ।
আরও দেখুন: