Site icon বাঁশি গুরুকুল [ Bansuri Gurukul BN ] GOLN

পর্ব ৪ : বাঁশিতে সারগাম বাজাতে শেখা

পর্ব ৪ বাঁশিতে সারগাম বাজাতে শেখা

পর্ব ৪ বাঁশিতে সারগাম বাজাতে শেখা

পর্ব ৪ : বাঁশিতে সারগাম বাজাতে শেখা।

বান্সুরি গুরুকুলের আরেকটি পর্বে আপনাদের স্বাগতম। বাঁশিতে কিভাবে সারগাম বাজানো যায় তা নিয়ে এই পর্বের আলোচনা। একটি রাগের নিয়মে স্বরগুলোর যাত্রাকেই এর সারগাম বলা হয়। আজকের পর্বের অনুশীলনগুলো বেশ সহজ, তবে গত পর্বে শিখিয়ে দেয়া “সা” এখনো আশানুরুপ না হয়ে থাকলে আজকের পর্বে অনুশীলনগুলো না করার পরামর্ষ আমাদের। পরিস্কার একটি সা আয়ত্তে না এনে বাকি স্বরগুলো বাজানোর চেষ্টা করলে, বাকি স্বরগুলো স্পষ্ট বাজানোর উপায় বের করা কঠিন হয়ে যায়।

[ পর্ব ৪ : বাঁশিতে সারগাম বাজাতে শেখা ]

সারগাম বাজানোর আগে, স্বরজ্ঞ্যান অবশ্যক। স্বর কি, জানা জরুরি। ভাষায়ে, ভাব সম্প্রসারণ হয় বাক্কের মাধ্যমে। বাক্য তৈরি হয় শব্দ দিয়ে এবং শব্দ তৈরি হয় অক্ষর দিয়ে। প্রতিটি অক্ষরের একটি উচ্চারন হয় বিভিন্ন অক্ষর সম্মিলিত করে বানানো হয় একটি শব্দ এবং এর সবকিছুই প্রকাশ করতে প্রয়োজন, শ্রুতি। স্বরতন্ত্রীর বিভিন্ন কম্পন পেশি দ্বারা নিয়ন্ত্রন করে কণ্ঠস্বর উৎপন্ন হয়। উৎপাদিত শব্দের পরিসরকে বলা হয় কম্পাক পুনরাবৃত্তি বা “ফ্রিকুয়েন্সি”। সংগীতকে আন্তর্জাতিক ভাষা বলা হয়। এই ভাষার নিয়মাবলিগুলো আর দশটি ভাষার মতই। বাছাইকৃত ফ্রেকুয়েন্সিকে আদর্শ করে হয় স্বর। সংগীতের ক্ষেত্রে, স্বর ভাষার অক্ষরের সমমান। স্বর দিয়ে মালা গেঁথেই সংগীত হয়। ভাষার মতই, উৎপাদিত স্বরের রুক্ষতা কিংবা মাধুর্য সাঙ্গেতিক একটি সপ্রসারনের মূল ছবি বদলে দিতে পারে।

 

পশ্চিমি সংগীতে স্কেল বদলানো একটি স্বাভাবিক পন্থা। এই ধরনের সংগীতে মতাদর্শ ভারতীয় সংগীতের তুলনায় ভিন্ন। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে সাতটি আদর্শ স্বর রয়েছে। শিল্পীরা একটি স্কেল নির্ধারণ করে রাগের নিয়ম অনুযায়ী সাতটি স্বর পরিবর্তন করে সংগীত সঞ্চালনা করেন। এই সাতটি মূল স্বরকে “সুদ্ধ” স্বর বলা হয়। এই সুদ্ধস্বরগুলোর মধ্যেই পাচটি স্বরের কিছুটা “কমল” কিংবা “তিব্র” রুপ হয়। শুদ্ধস্বরগুলোর তুলনায়ে কোমল স্বর কিছুটা নিচু এবং সুদ্ধস্বর কিছুটা উঁচু। তাই, সংগীতের নিয়মে মোট স্বর বারোটি। উচ্চারনের সুবিধারথে প্রতিটি স্বর এর প্রচলিত নামগুলো মূল নামের সংখিপ্ত রুপ। মূল নাম এবং প্রচলিত সংক্ষিপ্ত নামগুলো লিখে দেয়া হোল।

 

১ – সা – সরজ। এই স্বরের অন্য কোন রূপ নেই।
২ -রে – রেখাব। শুদ্ধ স্বর এবং কোমল স্বর হয়।
৩ – গা – গান্ধার। শুদ্ধ স্বর এবং কোমল স্বর হয়।
৪ – মা – মধ্যম। শুদ্ধ স্বর এবং তীব্র স্বর হয়।
৫ – পা – পঞ্চম। এই স্বরের অন্য কোন রুপ হয়না।
৬ – ধা – ধৈবদ। শুদ্ধ স্বর এবং কোম্ল স্বর হয়।
৭ – নি – নিষাধ/নিখাদ। শুদ্ধ স্বর এবং কোমল স্বর হয়।

 

ভারতীয় বেশিরভাগ যন্ত্রই কন্ঠসঙ্গিত দ্বারা প্রভাবিত। স্বাভাবিক ভাবে, মানুষের কন্ঠ ২.৫ থেকে ৩ সপ্তক পর্যন্ত যেতে পারে। বাঁশির ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম না। এই তিনটি সপ্তকের প্রথমটিকে “মন্দ্র সপ্তক”, এর পর “মধ্যসপ্তক” এবং “তার সপ্তক” বলা হয়। এর উপরে বা নিচেও আরও কিছু সপ্তক আছে, যা সাধারনত কন্ঠে ধারন করা সম্ভব হয় না।

এবার বাঁশিতে সা বাজাবার সময়। প্রথমেই, আগের দেখানো পর্বে বাঁশি ধরার তিনটি পধ্যতি থেকে একটি নির্বাচন করে নিতে হবে। বাতাস প্রবাহের ছিদ্রটি বাদ দিয়ে গুনলে, প্রথম তিনটি ছিদ্র বন্ধ করতে হবে প্রথম হাতের তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকা ব্যাবহার করে। বলে রাখা ভালো, বাতাস প্রবাহের ছিদ্রের পরেই যে হাতটি রাখা হয়, শেটিকেই অরথম হাত বলা হচ্ছে। বাকি তিনটি ছিদ্র খোলা রেখে, ফু দেয়ার মূল ছিদ্রে খুব আস্তে আস্তে বাতাস প্রবাহিত করতে হবে। এই ক্ষেত্রে, একটি তানপুরা ছেড়ে রাখা জরুরি। তানপুরা দিয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক কিছু অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক, সেই ক্ষেত্রে, একটি ডিজিটাল টিউনার ব্যাবহার করা যেতে পারে। চেষ্টা করতে হবে লম্বা শ্বাস নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে খুব আস্তে দম ফেলে সা বাজাতে হবে। এইভাবে ফুসফুসের ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

রে :

অনামিকা উঠিয়ে নিয়ে (তৃতীয় ছিদ্র) বাজাতে হবে রে। একটি সন্তোষজনক রে আয়ত্তে এলে, বড় একটি সা এর পরেই বড় একটি রে বাজাতে থাকতে হবে বার বার।

গা :

এবার প্রথম হাতের মধ্যমা এবং তর্জনী উঠিয়ে বাজাতে হবে গা। আশানুরুপ হলে পরপর সা, রে এবং গা বাজাতে হবে।

মা:

অনামিকা এবং মধ্যমা উঠিয়ে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ছিদ্র উন্মুক্ত রেখে, তর্জনীকে আলতো করে প্রথম ছিদ্রটিকে কিছুটা আধখোলা রাখতে হবে মা বাজাতে হলে। নতুন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটি কিছুটা কঠিন মনে হবে শুরুতে, তবে স্থির এবং নিয়মিত অনুশীলনে এই অসুবিধা ঘুচে যাবে অচিরেই। মা স্বর আশানুরূপ হলেই সা থেকে মা পর্যন্ত সবগুলো স্বর লম্বা শ্বাস নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বাজিয়ে যেতে হবে।

পা :

দুহাতের তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকা দিয়ে ছয়টি ছিদ্র বন্ধ করে বাতাস প্রবাহ করলেই বেজে উঠবে পা। আয়ত্তে এলেই একই নিয়মে অনুশীলন করতে হবে।

ধা :

সবগুলো ছিদ্র বন্ধ রেখে দ্বিতীয় হাতের অনামিকা ( ষষ্ঠ ছিদ্র) উঠিয়ে বাজাতে হবে ধা।

নি :

প্রথম চারটি ছিদ্র বন্ধ রেখে, দ্বিতীয় হাতের অনামিকে এবং মধ্যমা ( পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ছিদ্র) উঠিয়ে বাজাতে হবে নি।

সা (তার সপ্তক) :

মধ্য সপ্তকের সা (প্রথম সা) এবং তার সপ্তকের সা বাজানোর জন্য আঙ্গুলের ভঙ্গিতে কোন ব্যাতিক্রম নেই। শ্বাসের প্রবাহের মাধ্যমেই বাঁশির স্বরগুলোর সপ্তক বদলাতে হবে। তার সপ্তকের সা বাজাতে, প্রথম সা এর মত করেই আঙ্গুল রেখে, ঠোটের ফাকাকে আরও ছোট করে কিছুটা জোড়ে তীক্ষ্ণ বাতাস প্রভাবের মাধ্যমা বাজাতে হবে এই সা। নতুন শিক্ষার্থীদের এতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লেগে যায় তবে এই অসুবিধা চলে যায় নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে।

প্রতিটি স্বর আলাদা করে আশানুরূপ অবস্থায়ে এলেই, শিক্ষার্থীরা ক্রমাগত ভাবে সা থেকে তার সপ্তকের সা ছুয়ে আবার ফেরত যাবার অনুশীলন শুরু করতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে এই যাত্রার গতি নিয়ন্ত্রনে রেখে বুক ফুলিয়ে দীর্ঘক্ষণ প্রতিটি স্বর বাজানোর অনুশীলন করা অব্যশক। বান্সুরি গুরুকুলের ফেইসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে এই নিয়ে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল বানানো আছে, যা নতুন শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে। দেখার আমন্ত্রন রইল।

আরও পড়ুন:

 

 

Exit mobile version