“সহজ পদ্ধতিতে বাঁশি শিক্ষা” বইটি লিখেছিলেন স্বর্গীয় শ্রীহিমাংশু বিশ্বাস। বইটি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে। বইটি প্রকাশের পরে সঙ্গীত জগতে বহুল প্রসংশিত হলেও আর কোনো পুন-মুদ্রণ না হওয়ায়, বাঁশি প্রেমী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তাই বইটিকে স্ক্যান করে বাঁশি প্রেমী উদ্দ্যেশ্যে উত্সর্গ করলাম। আশা করি বাঁশি বাঁশি প্রেমীরা উপকৃত হবেন।
সহজ পদ্ধতিতে বাঁশি শিক্ষা
বইটি ডাউনলোড করুন: সহজ পদ্ধতিতে বাঁশি শিক্ষা – শ্রী হিমাংশু বিশ্বাস
বাঁশি হলো এক ধরনের সুষির অর্থাৎ ফুৎকার বা ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় এমন বাদ্যযন্ত্র। বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয়। বাঁশির পাশ্চাত্য সংস্করণের নাম ফ্লুট (flute)। ভারতীয় উপমহাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাঁশি তৈরিতে তরলা বাঁশ ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ শখের বশে ষ্টিলের, তামার, পিতলের, রূপার এমনকি সোনার পাইপ দিয়েও বাঁশি তৈরী করিয়ে থাকেন।
এই প্রাচীন এবং মনহরানো বাদ্যযন্ত্রের গায়ে সাতটি ছিদ্র (মাঝে মাঝে আটটিও ছিদ্র দেখা যায়) থাকে। যে নল বা পাইপটি দিয়ে বাঁশি তৈরি করা হয় তার একপাশ সম্পূর্ণ আটকে বায়ুরোধী করে দেওয়া হয়। বাঁশের তৈরি বাঁশিতে গিট বা গিরা একপাশকে বায়ুরোধী করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বন্ধ এবং খোলা প্রান্তের মাঝামাঝিতে ছিদ্রগুলো করা হয়। যে ছিদ্রটি বন্ধ প্রান্তের ঠিক কাছাকাছি থাকে সেটা দিয়ে কৌশলে ফু দিতে হয় এবং বাকি ছযটি ছিদ্র ডান হাতের মধ্যবর্তী তিনটি এবং বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কখনো আটকে কখনো ছেড়ে দিয়ে সুর তুলতে হয়।
বাঁশি তৈরিতে লাগে বিশেষ ধরনের মুলিবাঁশ বা নল বাশ। যার উভয় দিকের বেয় আকার ও পুরুত্ব এক সমান। পুরুত্ব পাতলা হলে সুন্দর মিষ্টি আর নিখুত সুর আসবে। বাঁশ রোদে শুকিয়ে বাঁশি অনুসারে মাপমতো কেটে টুকরো করা হয়। এরপর টুকরোগুলো মসৃণ করে নিতে হয়। সংরিহিত বাঁশের অংশকে বাঁশি তৈরির সঠিকপদ্ধতি অনুসারে তার গায়ে পেনসিল কলম আর পরিমাপ করার ফিতে বা রুলার দিয়ে মেপে চিহ্ন দিয়ে নিতে হয়। পরে কয়লার আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে ছিদ্র করা হয়। আঁকা হয় নকশা। এরপর মাটির প্রলেপ লাগিয়ে আবার আগুনে সেঁকে জলেতে ধুয়ে বাঁশিগুলো পুনরায় রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর বার্নিশ করা হয়। এরপর বাঁশিতে ফুঁ—সুর উঠল কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
ভারতে ছয় অথবা আট ছিদ্রযুক্ত বংশীর নামের নানা আঞ্চলিক রূপভেদ আছে, যেমন– বাঁসুরি, এলূ, কুলাল, কুলালু, কুখল, লিংবাফেনিয়াম, মুরলী, মুর্লি, নাদী, নার, পাওয়া, পুল্লঙ্কুঝল, পিল্লন গ্রোবি, পুলঙ্গোলি, বাঁসডান্ডা, বেণুবু প্রভৃতি। প্রাচীন ভারতে বাঁশির গঠনেও আঞ্চলিক বৈচিত্র্য দেখা যেত, যেমন– হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলে এক ধরনের বাঁশির খোঁজ মিলেছে, যার নাম আলগোজ়া। এই যন্ত্রের মধ্যে প্রচুর পর্দা আর একইসাথে দুটো বাঁশি থাকত, ফলে বাদক অনেক জটিল ধ্বনি সৃষ্টি করতে পারতেন। মধ্য ও দক্ষিণ ভারতে ঠিক এই যন্ত্রের নাম হয়ে যায় নাগোজ়া বা মাত্তিয়ান জোড়ি। আবার খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর বৌদ্ধ স্তূপলেখ-তে পাওয়া যায় কিছু একক আর জোড়া বাঁশির কথা।

বাঁশি শিক্ষার সূচিপত্র
আরও দেখুনঃ