উত্তমের বাঁশি । কবি আল মাহমুদ

আজকে আমরা উত্তমের বাঁশি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

 

উত্তমের বাঁশি । কবি আল মাহমুদ

 

উত্তমের বাঁশি । কবি আল মাহমুদ

বাঁশির ইতিহাস অনেক প্রাচীন সে আলোচনায় যেতে চাই না শুধু এটুকু বলব- শিশুকাল থেকেই আমি বাঁশি শুনে আসছি। একে তো আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সে শহরকে দেশবিভাগের আগে ভাটি বাংলার সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি বলা হতো, সেখানে যাদের সাথে বড়ো হয়েছি তাদের অনেকেই ছিলেন ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর পুত্র ও প্রপৌত্র। সেই সুবাদে সংগীতের সাথে বিশেষ করে উচ্চাঙ্গ সংগীতের সাথে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে পেরেছিল। এছাড়াও আমি নিজে ছিলাম গ্রামপ্রবণ মানুষ। সেখানে রাখালের বাঁশির মহিমা আমি নিত্যদিন উপলব্ধি করেছি।

 

google news
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

বাঁশি যে কতটা মর্মভেদী আদিম সংগীত যন্ত্র, আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি। এখনও গ্রাম বাংলায় উদাসীন রাখালের বংশীবাদন একেবারে উঠে যায়নি। বাঁশি এখনও গ্রাম বাংলার মানুষকে আকুল করে। আমার পাঠ্যবিষয়ের মধ্যেও যেহেতু বৈষ্ণব পদাবলী এটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। সে কারণেও আমি বাঁশির মর্ম খানিকটা বুঝতে পারি ।

একালের বংশীবাদকগণ উদাসীন ব্যক্তি নন। তারা নিপুণ চর্চায় বাঁশিকে এমন একটি বিষয়ে উত্তীর্ণ করেছেন, যা হয়ে উঠেছে সংগীতের এক অপরিহার্য ফুঁ যন্ত্র- যে ফুঁ বাদকের অন্তঃস্থল থেকে উঠে এসে শ্রোতাদের কানের ভিতর দিয়ে মরমে প্রবেশ করে। আমি এদেশের খ্যাতনামা অনেক বংশীবাদক ওস্তাদদের অসাধারণ বাদন রীতি সৌভাগ্যক্রমে শুনেই এসেছি। আজ এঁদের প্রকৃত উৎস উত্তরসূরি বড়ো একটা খুঁজে পাই না।

 

উত্তমের বাঁশি । কবি আল মাহমুদ

 

বলা যায়, আকস্মিকভাবেই আমার সাথে বংশীবাদক উত্তম চক্রবর্তীর সাক্ষাৎ হয়েছে। এই সাক্ষাৎকে আমি দৈব যোগাযোগ হিসেবে ধারণা করি। উত্তম নিজে আমার বাড়িতে এসে আমাকে তাঁর অসাধারণ এবং প্রাণস্পর্শী বাঁশি শুনিয়ে একেবারেই বিমোহিত করে গেছে। তাছাড়াও মঞ্চে তার পারফরমেন্স আমি দেখেছি এবং শ্রবণ করেছি। তার বাঁশির বাদন রীতিটি ক্লাসিক্যাল হলেও আনন্দ নিঃসরণ প্রক্রিয়াটি আধুনিক। বয়স কম হলেও অবলীলায় আমি উত্তম চক্রবর্তীকে গুস্তান বলে সম্বোধন করি।

এই বালক অত্যন্ত সমর্পিত চিত্ত বংশীধারী। তাঁর প্রতিটি ফু পরিকল্পিত এবং সংযত। বাঁশির রন্দ্রে তাঁর আঙুলের খেলা নতুন শ্রোতাদের চিত্তে এক ধরনের আবহ সৃষ্টি করে। উত্তমের সামগ্রিক বাদন রীতির মধ্যে উচ্চাঙ্গ সংগীতের রাগ মহিমা স্বাভাবিকভাবেই বিচ্ছুরিত হয়। এ বিষয়ে তাঁর পারদর্শিতা যেকোনো সংগীত শিল্পীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

 

উত্তমের বাঁশি । কবি আল মাহমুদ

 

বর্তমান সময়ে একজন তরুণ সংগীত শিল্পীর পক্ষে হাতে একটি বাঁশি নিয়ে অগ্রসর হওয়া খুবই দুরূহ কাজ। কারণ বর্তমান সম্প্রতিক ক্লাসিক্যাল বাদন রীতির বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পীরা বাহবা পেতে এতই কাতর যে আমি উত্তমের শুধু একটি বাঁশির শুদ্ধতা নিয়ে জীবনধারণ করার ব্যাপারে চিন্তান্বিত। তবুও একজন বিশুদ্ধ শিল্পীর প্রতিজ্ঞা এবং ক্লাসিকাল শুদ্ধতা তাঁকে কোথায় পৌঁছে দেবে তা কে বলতে পারে। আমি তরুণ ওস্তাদ উত্তম চক্রবর্তীর বাঁশি বাজানোর একান্ত সমর্থক। আমি তাঁর বিকাশ ও বিবর্তনের জন্য একজন অপেক্ষমাণ করি মাত্র। বাঁশি আমার আচরণীয় বিষয় নয়। কিন্তু বাঁশিতে মুগ্ধ ব্যক্তি আমি তরুণ ওস্তাদ উত্তম চক্রবর্তী সর্বান্তকরণে সাফল্য কামনা করি।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment