আমরা বাঁশি বাজানোর নিয়ম সম্পর্কে আজ আলোচনা শুরু করলাম। আমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে, আপনাদের বাঁশি শেখার প্রতিটি পর্যায়ের জন্য লেকচার ও হাতে কলমে ডেমোনেস্ট্রেশন ভিডিও প্রকাশ করছি। সেগুলো নিয়মিত দেখতে থাকুন। সম্পূরক অন্যান্য তথ্য আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানাবো। আপনার কোন বিষয়ে জানার থাকলে ভিডিওর নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।
বাঁশি বাজানোর নিয়ম
বাঁশির স্বর নির্গত পদ্ধতি ছয় ছিদ্র প্রকার বাঁশি
(১) প্রথম বাম তর্জনী (Forth finger) দ্বারা বাঁশির উপর ভাগ হতে ১ম ছিদ্র (middle finger) দ্বারা ক্রমানুযায়ী ২য় ছিল অনামিকা (Ring finger) দ্বারা ৩য় ছিদ্র এবং তৎপর ডান হাতের তর্জনী দ্বারা ৪র্থ ছিদ্র মধ্যমা দ্বারা ৫ম ছিদ্র ও অনামিকা অঙ্গুলী দ্বারা ৬ষ্ঠ ছিদ্র অর্থাৎ দুই হাতের ছয়টি আঙুলের মাংসপেশি দ্বারা বাঁশির ছয়টি ছিদ্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বাঁশি একটি অতি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। বাঁশি সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র। পাশ্চাত্য দেশে বিভিন্ন ধাতুর বাঁশি তৈরি হয়ে থাকে এবং এদের আকৃতিও বিভিন্ন ধরনের কিন্তু এশিয়া মহাদেশে বিশেষ করে পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশে বাঁশের তৈরি বাঁশি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি বাদ্যযন্ত্র। সাধারণত আমাদের দেশের বাদ্যযন্ত্রের দোকানগুলোতে যে বাঁশি পাওয়া যায় তার একটি চিত্র নিচে দেওয়া হলো:
বাঁশিতে মোট সাতটি ছিদ্র থাকে। উপরে একটি ছিদ্র যে ছিদ্রকে ফুঁ দিয়ে বাজানো হয় এবং তার পর কিছুটা নিচে থেকে পরপর ছয়টি ছিত্র, এবং ছিদ্রগুলো প্রায় সমান সমান ব্যবধানে। কিন্তু একটি সঠিক সুর এবং Professional বাঁশির আকৃতি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। একটি Professional বাঁশিতে আটটি ছিদ্র থাকে এবং ছিদ্রগুলোও আগে-পিছে কিংবা ছোট-বড় হতে পারে। নিচে একটি সঠিক বাঁশির ছবি দেওয়া হলো। যা পান্নালাল ঘোষ আবিষ্কার করেছেন।
এই বাঁশির প্রথম তিনটি ছিদ্র প্রায় সমান ব্যবধানে। সামান্য পরে চতুর্থ এবং পঞ্চম চিত্রটি এবং তার বেশ কিছু দূরে ষষ্ঠ ছিল। তারপর আর একটু দূরে একটি ছোটো ছিদ্র। এ ধরনের বাঁশিই আদর্শ বাঁশি। এই ধরনের বাঁশের বাঁশিই উচ্চাঙ্গ সংগীত সহ সব ধরনের অনুষ্ঠানে এবং রেকডিংয়ে বাজানো হয়। এই বাঁশি অবশ্যই একজন ভালো ক্লাসিক্যাল বাঁশি বাদকের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। যিনি সুর এবং স্কেল সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শী।
বাঁশি থেকে স্বর বের করা
বাম হাতের আঙুলগুলো বন্ধ রেখে ডান হাতের আঙুলগুলো সব উঠিয়ে ফুঁ দিলে যে শব্দ হবে তা হলে বাঁশির ‘সা’ শুধু বাম হাতের মধ্যমা বন্ধ করে ফুঁ দিলে ‘রে’ হবে। শুধু বাম হাতের তর্জনী এবং বন্ধ করে ফুঁ দিলে ‘গা’ হবে। বাম হাতের তর্জনী অর্ধেক উঠালে ‘মা’ হবে। ছয়টি ছিদ্র বন্ধ করলে ‘পা’ হবে এবং বাশির ফুঁ’ কিছুটা তীক্ষ্ণ করতে হবে।
পাঁচটি ছিদ্র বন্ধ রেখে ডান হাতের অনামিকা উঠালে ‘ধা’ হবে। তিনটি বন্ধ রেখে একটু জোরে ফুঁ দিলে তারার (সা) হবে। ‘সা’ ধরা অবস্থায় বাম হাতের অনামিকা অর্ধের সরালে কোমল ‘রে’ হবে । ‘রে’ ধরা অবস্থায় মধ্যমা অর্ধেক সরালে কোমল ‘গা’ হবে। সবগুলো আঙুল সরালে কড়ি ‘মা’ হবে। সব বন্ধ অবস্থায় ডান হাতের অনামিকা অর্ধেক সরালে কোমল ‘ধা’ হবে। ‘ধা’ ধা অবস্থার শুল্ক অর্ধেক সরালে কোমল ‘নি’ বাজবে।
উদারার স্বরগুলো আস্তে ফুঁ দিয়ে মুদারার স্বরগুলো মাঝারি আকারের ‘ফুঁ’ দিয়ে এবং তারার স্বরগুলো একটু জোরে এবং তীক্ষ্ণ ‘ফুঁ’ দিয়ে বাজাতে হবে। অনেকেই বাম দিকে ধরে বাঁশি বাজানো হয়। তাদের ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটাই উল্টো হবে।
১, ২, ৩ বাম হাতের তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকা দিয়ে এবং ৪, ৫, ৬ ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা এবং অনামিকা দিয়ে ধরতে হবে।
১নং চিত্র অনুসারে – যদি ১, ২, ৩ এই ছিদ্র তিনটি বন্ধ রেখে এবং ৪,৫, ৬ ছিদ্র তিনটি খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া হয়, তাহলে বাঁশিতে ‘সা’ বাজবে।
২নং চিত্র অনুসারে। যদি ১ ২ এই ছিদ্র দুটি বন্ধ রেখে এবং ৩, ৪, ৫, ৬ ছিদ্র চারটি খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দিলে ‘রে’ বাজবে।
৩নং চিত্র অনুসারে যদি ১ বা প্রথম ছিদ্রটি বন্ধ রেখে এবং ২, ৩, ৪, ৫, ৬ এই পাঁচটি ছিদ্র খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া হয়, তাহলে বাঁশিতে ‘গা’ বাজবে।
৪নং চিত্র অনুসারে । যদি ১ বা প্রথম ছিদ্রটি অর্ধেক বন্ধ রেখে বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া হয়, তাহলে ‘মা’ বাজবে।
৫নং চিত্র অনুসারে যদি ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ এই ছয়টি ছিদ্রই বন্ধ রেখে বাঁশিতে আগের চেয়ে সামান্য জোরে ফুঁ দিলে পা বাজবে।
৬নং চিত্র অনুসারে যদি ১, ২, ৩, ৪, ৫ এই পাঁচটি ছিদ্র বন্ধ রেখে ৬ বা ষষ্ঠ ছিদ্রটি খোলা রেখে দিলে বাঁশিতে ‘ধা’ বাজবে। এক্ষেত্রেও সামান্য জোরে দিতে হবে।
৭নং চিত্র অনুসারে । যদি ১, ২, ৩, ৪ ছিদ্র চারটি বন্ধ রেখে এবং ৫, ৬ এই ছিদ্র দুটি খোলা রো বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া হয়, তাহলে বাঁশিতে ‘নি’ বাজবে। এক্ষেত্রেও ফুঁ সামান্য জোরে দিতে হবে ।
৮ নং চিত্র ৮ নং চিত্র অনুসারে ১,২ ছিদ্র দুটি সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে ৩ বা তৃতীয় ছিদ্রটি অর্ধেক বন্ধ রেখে এবং ৪, ৬ ছিদ্র তিনটি খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দিলে কোমল ‘রে’ বাজবে।
৯নং চিত্র অনুসারে ১ বা প্রথম ছিদ্রটি সম্পূর্ণ বন্ধ, ২ বা দ্বিতীয় ছিদ্রটি অর্ধেক বন্ধ রেখে এবং না ৬ এই ছিদ্র চারটি খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দিলে কোমল ‘গা’ বাজবে ।
১০নং চিত্র অনুসারে ১.২, ৩, ৪, ৫, ৬ এই ছয়টি ছিদ্র অর্থাৎ সবগুলো ছিদ্র খোলা রেখে ফুঁ দিলে কড়ি ‘মা’ বাজবে।
১১ নং চিত্র অনুসারে ১, ২, ৩, ৪, ৫ এই পাঁচটি ছিদ্র বন্ধ রেখে ৬ বা ষষ্ঠ ছিদ্রটি অর্ধেক খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দিলে কোমল ‘ধা’ বাজবে।
১২নং চিত্র অনুসারে ১.২.৩, ৪ এই চারটি ছিদ্র বন্ধ রেখে ৫ বা পঞ্চম ছিদ্রটি অর্ধেক বন্ধ রেখে এবং ৬ বা ষষ্ঠ ছিদ্রটি খোলা রেখে বাঁশিতে ফুঁ দিলে কোমল ‘নি’ বাজবে।
বাঁশির সুর
আমাদের এই উপমহাদেশে সংগীতে মোট ১২টি স্বর আছে। এর মধ্যে শুদ্ধ স্বর ৭টি এবং বিকৃত। ৫টি।
শুদ্ধ সাতটি স্বর সা রে গা মা পা ধা নি
বিকৃত পাঁচটি স্বর। ঋ জ্ঞা ক্ষ দ ণ
বাঁশির স্কেল
স্কেল (scale) হলো উত্থান বা পতন স্কেল’ শব্দটি ল্যাটিন স্কোলা শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হলো মই। সংগীতে যার মানে স্বর গ্রামের উচ্চতানির মান। স্মরণ রাখতে হবে যে, সংগীতের ক্ষেত্রে প্রথমে আসবে স্কেল, তারপর সংগীত-
সংগীতে স্কেল ১২টি। তা হলো
CC# D D# EFF# GG AA #B.
বাঁশি শিখতে প্রথমে আঙুল অনুযায়ী স্কেল নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণ ও A A# অথবা G G# স্কেলের বাঁশি দিয়ে আরম্ভ করলে ভালো হয়।
চিত্রের সাহায্যে সা রে গা মা পা ধা নি এই স্বরগুলো বাজাতে দুই হাতের আঙুলের অবস্থান দেখানো হলঃ
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল:
আরও দেখুনঃ